যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪টি দেশের সরকার প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। ওই চিঠিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্টে।
প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে তারিখ দেওয়া হয়েছে জুলাই ৭, ২০২৫। মুহাম্মদ ইউনূসকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা সম্বোধন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রিয় জনাব ইউনূস,আপনাকে এই চিঠি দেওয়া আমার জন্য অনেক সম্মানের, যাতে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন রয়েছে এবং প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে, আপনার মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।’
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তথাপি, আমরা আপনার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে তা আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে। এ কারণে আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক বছর আলোচনা করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক, নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের সম্পর্ক একে অপরের সমকক্ষ থেকে অনেক দূরে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের সব ধরনের পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব। এই শুল্ক সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। উচ্চ শুল্ক এড়ানোর উদ্দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে সেগুলোর ওপরও সেই উচ্চ শুল্ক আরোপ হবে।’
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে এটা অনুধাবন করুন যে, ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম। আপনি অবগত যে, যদি বাংলাদেশ বা আপনার দেশের বিভিন্ন কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।’
তিনি লিখেছেন, ‘বস্তুত আমরা সম্ভাব্য সব কিছু করব যাতে দ্রুত, পেশাদারত্বের সঙ্গে ও নিয়মিতভাবে অনুমোদন পাওয়া যায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। যদি আপনি শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে। অনুগ্রহ করে এটা উপলব্ধি করুন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, যেটা স্থায়ী হওয়ার নয়, সেটা তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের অনেক বছরের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্য বাধা সংশোধন করার লক্ষ্যে এসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি!’
প্রধান উপদেষ্টাকে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্কহার আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না। এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’