প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: বুধবার , ২৯ জানুয়ারী , ২০২৫
গত এক দশকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎপাদনমুখী বা মেনুফ্যাকচারিং শিল্পের অবদান তার আগের দশ বছরের তুলনায় কমার তথ্য এসেছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক শুমারিতে।
২০২৪ সালের শুমারির প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিল্প খাতের অবদান ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বুধবার বিকালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটরিয়ামে ‘অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতি দশ বছর পর পর এ ধরনের শুমারি করে থাকে সরকার।
জরিপে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ঠিকানায় ব্যবসা পরিচালনাকারীদের বলা হচ্ছে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিট, ফুটপাথে বা হাঁটবাজারে অস্থায়ী উপায়ে ব্যবসা পরিচালনাকারীরা হচ্ছে অস্থায়ী বা সাময়িক অর্থনৈতিক ইউনিট। আর কৃষিকাজ ছাড়া বাসাবাড়িতে অন্য যেসব উৎপাদন ও সেবা পরিচালিত হয় সেগুলোকে বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক খানা। এই তিন ধরনের কর্মকাণ্ডকে বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক ইউনিট।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে স্থায়ী ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২১৪টি, অস্থায়ী ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬২১টি এবং অর্থনৈতিক খানা ৫০ লাখ ১২ হাজার ৫২৯টি।
অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে শহরাঞ্চলে ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ (৩৫ লাখ ৩১ হাজার ২০৩টি), গ্রামীণ অর্থনীতি ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ (৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৬১টি) রয়েছে। অর্থাৎ শহরের তুলনায় শহরের বাইরে অর্থতৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি হচ্ছে।
শুমারির প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক ইউনিটে যুক্ত আছেন ৩ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪ জন মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২৯৮ জন (৮৩.৩২ শতাংশ), নারী ৫১ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৭ জন (১৬.৬৭ শতাংশ) এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর ২ হাজার ৫৯ জন (০.০১ শতাংশ)।
স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটে যুক্ত আছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৮২ জন (৭৭.১০ শতাংশ), অস্থায়ীভাবে যুক্ত আছে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬৭ জন (২.৫৮ শতাংশ), অর্থনৈতিক খানায় যুক্ত আছে ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮৫ জন (২০.৩২ শতাংশ)।
গত তিনটি অর্থনৈতিক শুমারি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৩ সালে মোট ৩৭ লাখ ৮ হাজার ১৪৪টি অর্থনৈতিক ইউনিট থাকলেও ২০১৩ সালে তা ১১০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি হয়।
আর সবশেষে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি হওয়ায় বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে।
২০০৩ সালে যেখানে এক কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার ৪২২ মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, ১০ বছর পর তা ১১৭ শতাংশ বেড়ে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৮৫০ জনে দাঁড়ায়। আর সবশেষ ২০২৪ সালের জরিপে পাওয়া যায় তিন কোটি সাত লাখ ৬১ হাজার ৩৪ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য। অর্থাৎ এখানে বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
আর কী জানা গেল?
>> শুমারির ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক খানা ছিল ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭১টি, আর গত ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক খানার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ লাখ ১২ হাজার ৫২৯টিতে। বৃদ্ধির হার ৭৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে। এতে বোঝা যাচ্ছে গৃহকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গত ১০ বছরে বেশ বেড়েছে।
>> এই দশকে গ্রামীণ অর্থনীতিও বেশ ভালো করেছে। ২০২৪ সালের শুমারিতে দেখা যায়, মোট অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে গ্রামীণ অর্থনীতি ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ আর শহুরে অর্থনীতি ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
দেশের প্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে হয়, এরপর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে হয়। তৃতীয়য় অর্থনৈতিক শুমারি হয় ২০১৩ সালে। এর ধারাবাহিকতায়, ২০২৪ সালের ১০-২৬ ডিসেম্বর দেশের চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারি হয়।