প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: মঙ্গলবার , ১৪ অক্টোবর , ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থান খুঁজছেন— এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন মন্তব্যে দেশের রাজনীতিতে নতুন ঝড় উঠেছে। তার এই বক্তব্য ঘিরে উপদেষ্টাদের একাংশ সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছেন।
এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা নাহিদের মন্তব্যের জবাবে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা হলেন— আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
তাদের মধ্যে রিজওয়ানা হাসান নাহিদ ইসলামকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, “যাদের সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন, তাদের নাম ও প্রমাণ প্রকাশ করুন।”
৪ অক্টোবর এক বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ তৈরি করেছেন। তারা এখন নিজেদের সেফ এক্সিটের পথ খুঁজছেন।”
এই মন্তব্য প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
এনসিপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য কোনো গোপন তথ্য নয়; বরং বিষয়টি এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের নামের তালিকা তাদের হাতে রয়েছে। অবিলম্বে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
দলের এক নেতা বলেন, “কিছু উপদেষ্টা নির্দিষ্ট দলের প্রতি অতি অনুগত হয়ে পড়েছেন। হয়তো তারা ধরে নিয়েছেন, তাদের পছন্দের দলই পরবর্তী ক্ষমতায় আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে ছিল, তাদের বাদ দিয়ে দলীয় অনুগতদের উপদেষ্টা করা হয়েছে— সেটিই আজকের বিপর্যয়ের মূল কারণ।”
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন বলেন, “নাহিদ ইসলাম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন, তাই তিনি ভেতর থেকে অনেকে কীভাবে আচরণ করছেন তা দেখেছেন। তার মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাইরে থেকে যেটুকু দেখছি, তা হতাশাজনক। অনেক উপদেষ্টা দায়িত্বে নিষ্ক্রিয়, যেন অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার নয়, বরং কোনো রাজনৈতিক লবির প্রতিনিধি।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম বলেন,
“কিছু উপদেষ্টা কেবল দায়সারা দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ‘এক্সিট’ নিতে চাইছেন। এই মানসিকতা নিয়ে কোনো অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে পারে না।”
নাহিদ ইসলামের “উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট খুঁজছেন” মন্তব্য শুধু নতুন বিতর্কই নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরের ভাঙন ও আস্থাহীনতাকেও প্রকাশ করছে। সরকার ও আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যকার দূরত্ব আরও বাড়াচ্ছে এই বিতর্ক।