প্রতিবেদক, প্রকাশিত: শুক্রবার , ৩ জানুয়ারী , ২০২৫
বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা যে পাঠ্যবই বুঝে পেলেন তাতে দুনিয়া কাঁপানো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীরদের কথাও স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের গণ আন্দোলনের ইতিহাসে জোর কদমে ঢুকে যাওয়া জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনের ইতিহাস যেমন নতুন শিক্ষাবর্ষের নতুন বইগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক একই অধ্যায়ে লেখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথাও।
আগের শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইগুলোতে। নতুন বইতে উঠে এসেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে রচিত ‘শহীদদের বীরত্বগাঁথা’। আর বাদ পড়েছে আন্দোলনের জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বাণী ও ছবি। যুক্ত হয়েছে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের গ্রাফিতি।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের বইতে এসব পরিবর্তনের মধ্যে ইতিহাস শেখাতে শিশু-কিশোরদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ। নতুন করে ফিরে এসেছে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা।
বইতে আছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথাও। আছেন মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদের কথা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর কথা এসেছে বইতে।
আছে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের বন্ধু ‘বিটলস’ খ্যাত গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের সেই ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের’ ইতিহাস।
সরকারি প্রতিষ্ঠান এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “দেশের জন্য যার যতটুকু অবদান তা সেইভাবেই পাঠ্যবইতে আসছে।
আগে শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জনের জেরে ছাপার কাজ দেরিতে শুরু করায় সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দিতে পারেনি সরকার। কিছু পাঠ্যবই হাতে বছর শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এজন্য এক অনুষ্ঠানে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান আরও বলেন, “সব শ্রেণির ৪৪১টি বই আমরা পরিমার্জন করেছি। সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুততার সঙ্গে তুলে দিতে চাচ্ছি।”
জুলাই ‘শহীদদের বীরত্ব’
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের আমার বাংলা বইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জুলাই আন্দোলনে নিহতদের বীরত্বগাঁথা।
এ বইতে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ নামের ওই প্রবন্ধে শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শহীদ আমানল্লাহ মো. আসাদুজ্জামান, শহীদ মতিয়ুর রহমান মল্লিক, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক, শহীদ শামসুজ্জোহা, শহীদ নুর হোসন, শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন, শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের কথাও বলা হয়েছে।
এতে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলা হয়, ”এত ত্যাগের পরও এ দেশের মানুষ অধিকার পায় না, বৈষম্য কমে না। অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা তাই ২০২৪ সালে আবার রাস্তায় নামে। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়।
”পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
”সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন।”
ওই প্রবন্ধে জুলাই আন্দোলনে নিহত নৌবাহিনী কলেজের শিক্ষার্থী গোলাম নাফিজ ও দশম শ্রেণির ছাত্র আনাসের আত্মত্যাগও তুলে ধরা হয়েছে।