প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: বুধবার , ৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫
চাহিদা ও উৎপাদন ঘাটতির ফারাকে আসন্ন গরমের মওসুমে সর্বোচ্চ ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
অবশ্য
এই সময়ে সারাদেশের এসিগুলো ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখার চর্চা
করা গেলে তেমন লোডশেডিং দিতে হবে না বলেও মনে করেন উপদেষ্টা।
অতীতের
ধারাবাহিকতায় এবার গ্রীষ্ম বা গরমের মওসুমে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা
উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছরও গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সময়ে দুই থেকে তিন
হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি বা লোডশেডিং হয়েছিল। উৎপাদন উঠেছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াটের
কিছুটা বেশি।
২০২৪
সালের ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গিয়েছিল। অবশ্য এটা সাময়িক
হিসাব; অধিকাংশ সময় উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াটের
আশেপাশে।
বুধবার
বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন রোজার মাস ও সেচ মওসুমে
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ
সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়।
সভাশেষে
সাংবাদিকদের কাছে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, রোজার মাস লোডশেডিং মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টেকনিক্যাল কারণ ছাড়া লোডশেডিং যাতে না হয় সে
জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোজায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট
বিদ্যুতে চাহিদা থাকবে। আমরা পুরোপুরি সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছি।
মন্ত্রণালয়ের
তৎপরতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম মিটিং
করেছি অর্থের সংস্থানের জন্য, রোজা এবং গ্রীষ্ম মওসুমে যে পরিমাণ অর্থের
প্রয়োজন তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রোজার মাসে যে পরিমাণ জ্বালানি
প্রয়োজন হবে, তার জন্য সে পরিমাণ টাকা
ও ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।”
বিদ্যুৎ
উৎপাদনে এখন ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুর গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। রোজার মাসের জন্য ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। আর এপ্রিল
থেকে সেপ্টেম্বর ১১০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে,” বলেন উপদেষ্টা।
রোজায়
প্রয়োজনে অন্য গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বিদুৎ উৎপাদন ঠিক রাখা হবে বলে জানান
উপদেষ্টা। এজন্য বাড়তি ৪
কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে বলে জানান তিনি।
লোডশেডিং
কমাতে গতবছরের মতো এবারও এসিগুলো ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখার
পরামর্শ দেন উপদেষ্টা। সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সময়েও সরকারের পক্ষ
থেকে এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রির মধ্যে রাখার পরামর্শ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
উপদেষ্টা
বলেন, “গ্রীষ্ম ও সেচ মওসুমে বিদ্যুতে চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট।
এর মধ্যে কুলিং (এসি) লোড রয়েছে ৬ হাজার মেগাওয়াট।
বিভিন্ন কারণে ৭০০-১৪০০ লোডশেডিং করতে হতে পারে। আমরা যদি এসির তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬
ডিগ্রির মধ্যে রাখতে পারি তাহলে ২ থেকে ৩
হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। তাহলে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে না।”
এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নিচ্ছি না, অনেক চাপ থাকার পরও আমরা দাম বাড়াইনি। গ্যাসের দাম নতুন শিল্পে বাড়বে, বিদ্যমান শিল্পে আগের দর থাকবে। আমদানি
করতে খরচ পড়ছে ৭৫ টাকা, সেই
টাকা দিয়ে এনে ৩০ টাকায় দেওয়া
সম্ভব না।”
বিদ্যুৎ
জ্বালানি খাতে সরকার এখন বিভিন্ন সরবরাহকারীদের ৪০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সময়ে
সময়ে কিছু বকেয়া পরিশোধ করে থাকে সরকার। তবে বকেয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হতে
পারে বলে বেসরকারি সরবরাহকারীরা গতমাসে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে
উপদেষ্টা বলেন, “বিদ্যুৎ ও
জ্বালানি খাতের কাছে বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের
পাওনা রয়েছে। অনেকেই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। কতদিনের মধ্যে বকেয়া পুরোপুরি পরিশোধ হবে এ কথা নির্দিষ্ট
করে বলা কঠিন। তবে আমরা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বিপিসির সব বকেয়া পরিশোধ
করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠান
থেকে গরমের মওসুমের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়া হয়।
এরমধ্যে
রয়েছে- পিক আওয়ারে
সেচ পাম্প বন্ধ রাখা, রাত ১১টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সেচ পাম্প চালাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, ইফতার, সাহরি ও তারাবির নামাজে
লোডশেডিং না করা, মসজিদগুলোর
এসি ২৫ ডিগ্রির নিচে
না নামানো, ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা।
জ্বালানি
ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানসহ বিভিন্ন
সংস্থা ও কোম্পানির শীর্ষ
কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।