Campus Mirror প্রকাশিত: রবিবার , ১২ জানুয়ারী , ২০২৫
বাংলাদেশে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে আত্মঘাতী দাবি করে এই উদ্যোগ বাতিল এবং চলমান গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে ইন্ডাষ্ট্রি এক্সিকিউটিভ ফোরাম-আইইএফ ।
বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের নিয়ে নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম আইইএফর সদস্যরা
শনিবার রাতে রাজধানীর লা ভিঞ্চি হোটেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় গ্যাস খাত নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা্ও তুলে ধরেন।
আইইএফ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস
এইচ ফাহিম
এর সঞ্চালনায় “শিল্পোৎপাদন, সাশ্রয়ী জ্বালানি, কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়ন’
শীর্ষক সভায় বক্তব্য রাখেন যমুনা গ্রুপের হুরাইন হাইটেক ফেব্রিকের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম, মিথিলা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজেদুর রহমান তালুকদার, প্যারাগন সিরামিকসের সিনিয়র জিএম মোসাহেব কাক্কা ও জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্সের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) মো. শফিকুর রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
সম্প্রতি শিল্প সংযোগে গ্যাসের নতুন গ্রাহকদের জন্য বিদ্যমান খরচ ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার তরফ থেকে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা পড়েছে বলে
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এলেও দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কিছু জানান
হয়নি।
সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে ঘনঘন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২২ এর জুনে ১৫.৫২ শতাংশ, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৭.৫০ শতাংশ, ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারি ২.৫০ শতাংশ
এবং ২০২৪ এর মে মাসে ২.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়। সে সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাসের প্রতিশ্রুতি, শিল্পের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা, পণ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বাধ্যবাদকতা এবং সর্বোপরি অর্থনীতিকে স্থিতশীল রাখতে শিল্প মালিকরা মূল্য বৃদ্ধি মেনে নেন। যদি্ও গ্যাসের মূল্য অযাচিতভাবে বৃদ্ধির কারণে ইতিমধ্যেই উৎপাদনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে দেশের অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আইইএফ সভায় খান কনসালটেন্সির প্রধান নির্বাহী এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিষ্ট্রিবিউশনের সাবেক পরিচালক শফিকুল ইসলাম
আমদানি নির্ভর না হয়ে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎস সন্ধান এবং উন্নত কারিগরি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে গ্যাসের জন্য নিরাপদ এবং অর্থ ও সময়সাশ্রয়ী পদ্ধতির তাগিদ দেন।
আইইএফ বলছে, নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে শিল্প ধংস হবে, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বন্ধ হবে। কারণ নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণ না করলে উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়িক সক্ষমতা হারান।
সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশে শিল্প কারখানাগুলোতে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের সহজলভ্যতা নিশ্চিতে বর্তমান ভঙ্গুর অবস্থার উত্তরণকল্পে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দুর করে শিল্পবান্ধব আধুনিক নীতিকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। গ্যাস উত্তোলন, ক্রয়, ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া্ও গুরুত্বপূর্ণ।
আইইএফ বলছে, গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মতামত অন্তর্ভক্তিপূর্বক পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। বিকল্প এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সরকারী সহায়তা, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস সন্ধান এবং প্রয়োজনীয় গবেষণার উপরেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সংগঠনটি বলছে উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবসায়িক বাস্তবতা বিবেচনা না করে বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ধরণের শুল্ক ও কর আরোপের ফলে পণ্য উৎপাদন খরচ বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে এবং অনেকগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এতে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে। বিশষে করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আগে অবশ্যই শিল্পগ্রাহকদের পরামর্শ ও মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
গ্যাস সমস্যা সমাধানে আইইএফ
সভায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাবনা সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১. গ্যাস বিক্রি করে সরকারী মুনাফা না করা।
২. এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা।
৩. যে কোন মূল্যে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৪. শিল্প গ্রাহকদের সাথে আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি/ পুনঃনির্ধারণ / শুল্ক বা কর আরোপ করা।