রাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর , ২০২৫
৩৫ বছর পর নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোটগ্রহণ। এবার রাকসুর ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০৫ জন প্রার্থী। প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনও।
রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল তিন দশকেরও বেশি আগে। তখন ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রভাব—ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রী নেতৃত্ব দিয়েছে একাধিকবার। আশির দশক পর্যন্ত তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতি করেছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও। তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তুলনামূলকভাবে তখন দুর্বল অবস্থানে থাকলেও নব্বইয়ের দশকের শেষ নির্বাচনে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পায়।
ইসলামী ছাত্রশিবিরও তখন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়, কিন্তু রাকসু নেতৃত্বের স্বাদ তারা কখনো পায়নি।
২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির চিত্র বদলে গেছে। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বামপন্থি সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, আর ছাত্রলীগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর পুরোপুরি ক্যাম্পাস ছাড়ে।
ফলে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে। মোট এগারটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে কেবল এই দুই সংগঠন। কিছু আংশিক ও “ডামি প্যানেল” নিয়েও আলোচনা চলছে ক্যাম্পাসে।
রাকসুর ইতিহাসে কখনো জয় না পাওয়া ইসলামী ছাত্রশিবির এবার আশাবাদী—কারণ ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে তাদের ঐতিহাসিক জয় কর্মীদের নতুন উদ্দীপনা দিয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদলও শেষ নির্বাচনের ভিপি পদে বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে চায়।
এছাড়া বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন, যারা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
ভোটের তথ্য
ভোটগ্রহণ সময়: সকাল ৯টা–বিকাল ৪টা
কেন্দ্র: ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্র
মোট ভোটার: ২৮,৯০১ জন (নারী ১১,৩০৫; পুরুষ ১৭,৫৯৬)
রাকসুর ২৩টি পদে প্রার্থী: ৩০৫ জন
১৭টি হল সংসদের ২৫৫টি পদে প্রার্থী: ৫৫৫ জন
সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি পদে প্রার্থী: ৫৮ জন
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: ২১২ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা
ভোট শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়া। এজন্য প্রতিটি ধাপে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। ক্যাম্পাস ও আশপাশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়ন রয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।”
রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই ভোটার হতে পেরেছেন। আর ভোটার হলেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগও রয়েছে তাদের।
তিন দশকের বেশি সময় পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হাতে পাচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার—ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।