প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: সোমবার , ৭ এপ্রিল , ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার রপ্তানিকারকের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
নতুন শুল্কের কারণে পণ্যের চাহিদা কমলে কিংবা ক্রয়াদেশ অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে দেশের বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়তে পারে যার অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো দেখাচ্ছে, সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৫৬১টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ২১২টি দেশে পণ্য রপ্তানি করেছে। মোট রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৬৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৩২৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের এমন প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান কতটা সংকটে আছে, সেটি পর্যালোচনা করে দেখেছে প্রথম আলো। সে দেশে পণ্য রপ্তানিকারক ২ হাজার ৩২৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৫৭টিই করেছে মোট রপ্তানির এক–চতুর্থাংশের বেশি। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাজারটিতে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৯৫ কোটি ডলার। ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি ক্রয়াদেশ কমলে এসব প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বে।
৯৫৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে ২৮০টি প্রতিষ্ঠান। কারণ, তারা নিজেদের উৎপাদিত শতভাগ পণ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করে। তাদের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৩৫ কোটি ডলার। উচ্চ মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ২৩৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট রপ্তানির ৭৬-৯৯ শতাংশের গন্তব্যই যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২২৭ কোটি ডলার।
মধ্যম ঝুঁকিতে আছে ১৮১ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট রপ্তানির ৫১-৭৫ শতাংশ হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর তারা ১৭১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।
নিম্ন মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা ২৬০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ১৫১ কোটি ডলার। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট রপ্তানির ২৬-৫০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে আছে ১ হাজার ৩৬৯ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তাদের অবশ্য মোট রপ্তানি পণ্যের ১-২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮২ কোটি ডলার।
পোশাক শিল্পেই বেশি দুশ্চিন্তা
২০২৩–২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৮৭ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক, যার মূল্য ৬৬৯ কোটি ডলার। ১ হাজার ৮১০টি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ জন্যই ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে পোশাকশিল্পেই দুশ্চিন্তা বেশি।
প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে।
তৈরি পোশাকের পর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হচ্ছে ক্যাপ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সে দেশে ৩৩ কোটি ডলারের ক্যাপ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ৫২ লাখ ডলারের পণ্য। মোট ক্যাপ রপ্তানির ৬৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
এই বাজারে পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়ার জুতা। গত অর্থবছরে দেশ থেকে সব মিলিয়ে চামড়ার জুতা রপ্তানি হয় প্রায় ৫৫ কোটি ডলারের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ডলারের জুতা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হোমটেক্সটাইল, পরচুলা, জুতা ছাড়া চামড়াজাত পণ্যসামগ্রী।
যেসব প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে আছে
দেশি গ্রুপগুলোর মধ্যে শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হা-মীম গ্রুপ। তারা গত অর্থবছরে ৬৩টি দেশে ৫৮ কোটি ৯১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর প্রায় ৭৪ শতাংশ পণ্যই রপ্তানি হয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে হা–মীম গ্রুপের রিফাত গার্মেন্টস যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পরিমাণ ২১ কোটি ডলার। এ ছাড়া তাদের অ্যাপারেল গ্যালারির প্রায় শতভাগ পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপ গত অর্থবছরে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হয়েছে ৯০ শতাংশ পণ্য। গ্রুপটির সুবর্ণ গার্মেন্টস ও সি ব্লু টেক্সটাইলের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতভাগ পণ্য যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।