জাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: শুক্রবার , ৫ সেপ্টেম্বর , ২০২৫
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজে ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর হলেও দিন দিন বাড়ছে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ।
আচরণবিধির ৭(গ) ধারায় বহিরাগতদের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হলেও কিছু প্রার্থীকে সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। দোকান, ক্যাফেটেরিয়া, রিকশা, এমনকি আবাসিক হলের প্রহরীর টেবিলেও পোস্টার ও লিফলেট সাঁটা হয়েছে। নির্ধারিত মাপের বাইরে বড় পোস্টার ব্যবহার, অন্য প্রার্থীর পোস্টারের ওপর নতুন পোস্টার লাগানো এবং পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনাও ঘটছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছে পোস্টার টানানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ব্যয়ের ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থীদের সর্বোচ্চ খরচের সীমা ৭ হাজার টাকা এবং হল সংসদের প্রার্থীদের ৪ হাজার টাকা হলেও, অনেকেই কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করছেন। অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ ১০–২০ হাজার লিফলেট ছেপেছেন, যার খরচ দাঁড়িয়েছে ১৫–২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সমর্থকদের নিত্যদিনের খাবার-চা-নাশতায়ও কয়েক হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
জিএস পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন অভিযোগ করে বলেন, “অনেক প্রার্থী নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রচারণা শুরু করেছেন। আমরা অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এতে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান জানান, “আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। লোকবল সীমিত থাকায় প্রশাসনের সহায়তা নিচ্ছি। শিগগিরই বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদে সর্বাধিক ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মীর ফেরদৌস হোসেন স্বাক্ষরিত তালিকা অনুযায়ী ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে ৬ জন, এজিএস পদে ৪ জনসহ মোট ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থীরা সরাসরি রুমে এসে পরিকল্পনা জানাচ্ছেন, এতে তাদের বিচার করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, “আমরা প্রার্থীদের পরিকল্পনা জানতে পারছি, এতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে।” অন্য শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, “প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমজমাট হবে। তবে আমরা চাই নির্বাচিতরা যেন সত্যিই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেন।”
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, প্রায় তিন দশকের বেশি সময় পর এই নির্বাচন জাহাঙ্গীরনগরে গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং আচরণবিধির যথাযথ প্রয়োগই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।